Parmadon, the lane of nostalgia

Image : © Shiladitya Mukherjee
উত্তর ২৪ পরগনা জেলার মহকুমা শহর বনগাঁ-র অনতি দূরে অবস্থিত বিভূতিভূষণ অভয়ারণ্য (পারমাদন) । উইকএন্ড ডেস্টিনেশন এবং পিকনিক স্পট হিসাবে জনপ্রিয় হলেও পাখি দেখার জায়গা হিসাবে একটু আন্ডার-এক্সপ্লোর্ড বলা চলে । ইছামতি নদীর ধার ঘেঁষে গড়ে ওঠা কতকটা ‘U’ আকৃতির এই অভয়ারণ্যটি একটি ডিয়ার পার্ক-ও বটে । কয়েকশো চিতল হরিণ এখানে সুরক্ষিত বেষ্টনীর মধ্যে বসবাস করে । তবে হরিণদের right to privacy-র জাঁতাকলে সর্বত্র-গামী মনুষ্য জাতি এর ভেতরে প্রবেশের অধিকার থেকে সম্পূর্ণরূপে বঞ্চিত ! বেষ্টনীকে জড়িয়ে থাকা সর্পিল রাস্তা ধরে হাঁটাই জঙ্গল আস্বাদনের একমাত্র পন্থা ।

Image : © Shiladitya Mukherjee
পাখি দেখার নেশায় পারমাদনের সঙ্গে আমার সখ্যতা অনেকদিনের । গাছপালা ও খাবারের প্রাচুর্যতা থাকার জন্য পাখির আনাগনা নেহাত কম নয় এখানে । সকালবেলা আলো ফোটার প্রাক্কালের আলো-আঁধারি মুহূর্তে আলাদা মাত্রা যোগ করে এখানকার স্থায়ী বাসিন্দা Abott’s Babbler-এর সুমিষ্ট কাকলি । হাঁটতে হাঁটতে Common Woodshrike, Common Iora, Orange-headed Thrush, Small Minivet, Black-naped Monarch ছাড়াও বিভিন্ন প্রজাতির Dove, Woodpecker, Parakeet, Oriole, Barbet, Owl, Nightjar, Kingfisher, Cormorant, এবং Bittern-রা পরিচয় করে নেবে আপন ইচ্ছায় । জঙ্গল ঘন হতেই Giant Wood Spider, Signature Spider-দের অপরূপ বুনন-শৈলি চোখে পড়বে । পথে সঙ্গী হওয়া প্রজাপতি, ফড়িং আরও হরেক কীটপতঙ্গরা আপনাকে নিয়ে যাবে পারমাদনের অন্দরমহলে ।
Image : © Shiladitya Mukherjee
এ জঙ্গলের রাজভার ভয়ঙ্কর অথচ সুন্দর Raptor-দের হাতে ন্যস্ত তা বলাই বাহুল্য । Green cafeteria-য় বসে মৎস্য-বিলাসী Grey-headed Fish Eagle তার আধিপত্যে প্রবেশকারী আগন্তুকদের পরখ করে নেবে আপনার অজান্তে । নদীর ধার দিয়ে হাঁটার সময় এখানকার breeding resident Changeable Hawk Eagle-এর সঙ্গে দৃষ্টি বিনিময় অবসম্ভাবি । Oriental Honey Buzzard, Shikra, Crested Serpent Eagle, Booted Eagle রাও এ রাজত্বেরই অংশ বিশেষ !
এই জঙ্গলের এক gem হল Emerald Dove । এখানকার এই স্থায়ী বাসিন্দাটির ডাক ব্যাকড্রপে চলতে থাকলেও এদের চোখে ঠাহর করা বেশ দুষ্কর । একইভাবে অপর এক breeding resident Jerdon’s Leafbird নিজেকে জঙ্গলের সাথে এমনভাবে মিশিয়ে রেখেছে যেন অন্যের চোখে ধরা না দিতে সে এক্কেবারে বদ্ধপরিকর !
Image : © Shiladitya Mukherjee
শীতকালীন অতিথিদের জন্য পারমাদন একটি নির্ভরযোগ্য আস্তানা । বিভিন্ন প্রজাতির Wagtail-এর উপস্থিতি শীত আগমনের বার্তা বয়ে আনে । এরপর Siberian Stonechat, Scaly Thrush, Tickell’s Thrush, Verditer Flycatcher, Brown-breasted Flycatcher, Blue-throated Blue Flycatcher, বিভিন্ন প্রজাতির Sandpiper-রা একে একে উপস্থিত হয় তাদের সদাচঞ্চলতা নিয়ে । Summer visitor-দের তালিকায় রয়েছে Blue-tailed Bee-eater, Asian Paradise Flycatcher, Chestnut-headed Bee-eater, Spangled Drongo-এর মত পাখিরা । তবে এদের মধ্যে Hooded Pitta সর্বাপেক্ষা elusive । ছোট্টো, গাঢ় পিত্ত-সবুজ পাখিটির মাথা-গলা কালো, চাঁদি মরচে-বাদামি আর পেট টকটকে লাল । ২০১৫ সালে, প্রায় ৮০ বছর পর দক্ষিণবঙ্গ থেকে প্রথম পাখিটির হদিস পাই আমরা ।
পরিশেষে বলি, অন্দরমহলের সকল সভ্যরা একবারে আপনাকে দেখা দেবে এমন প্রত্যাশা না করাই শ্রেয় । প্রকৃতির সঙ্গে সখ্যতা যত বাড়াবেন, তার উপাদান গুলিও তত বেশি করে ধরা দেবে আপনার চোখে. .ভিন্ন রুপে. .ভিন্ন স্বাদে ।
>> ২০১৩ থেকে ২০১৬ সাল অবধি ০.৬৪ বর্গ কিমি এই অভয়ারণ্য থেকে সর্বমোট ১০২ টি পাখির প্রজাতি নথিবদ্ধ করেছি ।
পথ-নির্দেশিকা– বনগাঁ স্টেশন থেকে ভ্যান/ টোটোতে মতিগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড (১০ মিনিট) । সেখান থেকে বাস/অটোতে কলমবাগান (২৫ মিনিট) । কলমবাগান থেকে অটো/ ম্যাজিক গাড়িতে পারমাদন (৩০-৪০ মিনিট) ।

ছবি ও লেখা : Shiladitya Mukherjee (কপিরাইটেড কনটেন্ট)সোর্স : ফেসবুক

0 Comments