এ এক মাটির দেশ। কথায় বলে লাল মাটির দেশ। লাল মাটি বাঁকুড়ার বিশেষত্ব হলেও পুরুলিয়ার মাটির সুখ কিছু অংশে কম যায় না।
পুরুলিয়া পশ্চিমবঙ্গের মধ্য-পশ্চিম সীমান্তে ঝাড়খণ্ডের সীমানায় অবস্থিত। বেশ কয়েকটি পাহাড়ে ঘেরা আর কংসবতী নদীর ওপর তৈরী বাঁধ পুরুলিয়া কে করে তুলেছে প্রাকৃতিক ভাবে সুন্দর।
পুরুলিয়া পৌঁছনোর জন্য হাওড়া থেকে ট্রেন কিংবা ধর্মতলা থেকে বাস এ যাওয়া যায়। বাস এ সময় লাগে প্রায় 8 থেকে 10 ঘন্টা।
অযোধ্যা পাহাড় - পুরুলিয়ায় পাহাড় মন্ডলীর মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় হলো অযোধ্যা পাহাড়। অযোধ্যা ও আশেপাশের পাহাড়গুলো নিয়ে অযোধ্যা পাহাড় পড়জোটপন কেন্দ্র গড়ে উঠেছে।
থাকবেন কোথায়?
পুরুলিয়া থেকে বাস কিংবা প্রাইভেট গাড়িতে করে অযোধ্যা পাহাড় যায়। আপনি পাহাড়ের উপরে থাকতে পারেন, অথবা পাহাড়ের নিচে বাঘমুন্ডি গ্রামেও থাকতে পারেন। তবে পাহাড়ের উপরেই থাকা টা ভালো। উপরে বেশ কিছু হোটেল - নীহারিকা, মালবিকা, দূর্গা লজ, ভারত সেবাশ্রম রয়েছে, যেখানে আপনারা থাকতে পারেন। তবে আগে থেকে বুক করে যাওয়া ভালো। কারণ আর বিশেষ কিছু রিসোর্ট এখানে নেই।
কি কি দেখবেন?
অযোধ্যা পাহাড়ের মধ্যে বেশ কিছু ঝর্ণা, নদীবাঁধ, লেক রয়েছে।
মার্বেল লেক / পাথর খাদান - চারপাশে পাথর এর পাহাড় বেষ্টিত একটি অপরূপ সুন্দর লেক। পাহাড়ের গায়ে বিভিন্ন পাথরের স্তরের চিহ্ন পাবেন দেখতে। বহু ধরণের পাথর দিয়ে তৈরী এই লেক।
বামনী ফলস - অযোধ্যা পাহাড়ের সবচেয়ে জনপ্রিয় ঝর্ণা হলো বামনী ফলস। ঝর্নার বিভিন্ন স্তরে জলের ওই ছল ছল করে ঝরে পড়ার শব্দ, বেশ সুন্দর লাগে। সবচেয়ে বড় কথা, এই ঝর্নার পাস থেকে পাথরের সিঁড়ির একটি রাস্তা প্রায় 30 তলা নিচে পাহাড়ের পাদদেশে একটি লেকে গিয়ে মিশেছে। পাহাড়ের প্রতিটি পরতেই এক একটা অজানা সুন্দর কে খুঁজে পাবেন আপনি। specially যখন সূর্য পাহাড়ের পিছনে ডুবতে ব্যস্ত। রঙ্গিন আলো আঁধারির খেলায় ঝর্নার রূপ ই তখন অন্যরকম।
ঠুরগা ফলস- বামনীর বেশ কিছু দূরেই রয়েছে ঠুরগা ফলস। দুটি পাহাড়ের মাঝখানে সরু সুতোর মতো জলের ধারা আপনার মন কাড়বে। এবং যখন আপনি ঝর্নার ঠিক নিচে।
লোয়ার ড্যাম - অযোধ্যা পাহাড়ের উপর কংসবতী নদীতে দুটি ড্যামের মধ্যে একটি হলো লোয়ার ড্যাম। সানসেট এর জন্যে এই জায়গা খুবই মনোরম। পিছনের পাহাড় উঠে গেছে আপার ড্যাম পর্যন্ত, আর সামনে ড্যামের জল ঝিলের মধ্যে সূর্যের আলোর সাথে খেলা করে । সে সত্যিই এক অপরূপ দৃশ্য।
আপার ড্যাম - লোয়ার ড্যাম থেকে উপরে উঠলেই একেবারে উপরে আপার ড্যাম পাওয়া যাবে। পিকনিক করার জন্য একেবারে আদর্শ জায়গা!! যদিও আপার ড্যাম এ বেশ কিছু পুলিশি সতর্কতা রয়েছে।
আপার ড্যাম এ জল সঞ্চয় করে রাখা হয়। পরে সেই জল থেকে টারবাইন এর মাধ্যমে বিদ্যুৎ তৈরী হয়, আর জল পৌঁছায় লোয়ার ড্যাম এ। আপার ড্যাম থেকে পুরো অযোধ্যা পাহাড় মন্ডলকে দেখা যায়।
ময়ূর পাহাড় - আপার ড্যাম থেকে অযোধ্যা আসার পথে বা দিকের একটি রাস্তা দিয়ে ময়ূর পাহাড় যাওয়া যায়। পাহাড়ের একদম উপরে উঠলে পুরো অযোধ্যা কেই চোখের সামনে পাওয়া যায়। এক সময় এখানে ময়ূরের দেখা মিলত। এখানও মাঝে মাঝে দেখা যেতে পারে। উপরে একটি হনুমানের মন্দির রয়েছে।
রাম মন্দির - অযোধ্যা পাহাড়ের উপরে যেখানে পর্যটন শিল্প গোরে উঠেছে, পায়ে হাঁটা পথে প্রায় 15 মিনিট দূরে রাম মন্দির রয়েছে। মন্দিরের মধ্যে রাম, সীতা , লক্ষ্মণ এর বিগ্রহ রয়েছে। মন্দিরের উপরের দেওয়ালে রামায়ণের বিভিন্ন ঘটনা চিত্রিত করা হয়েছে।
সীতা কুন্ড - কথিত আছে, রাম সীতা যখন অযোধ্যা পাহাড়ে ছিলেন, সীতার জল পিপাসা পাওয়ায়, রাম বান মেরে পাহাড় থেকে জল বার করে ছিলেন। এই কুয়া সীতাকুন্ড নাম পরিচিত। পাহাড়ের উপরে একটি অপরূপ সুন্দর জলাধার ও পাশে উষ্ণ জলের প্রস্রবণ নিয়ে সীতাকুন্ড তৈরী।
চরিদা- পুরুলিয়া যে ছৌ নাচের জনয়প বিখ্যাত, সেই ছৌ মুখোশ এই গ্রামেই তৈরী হয়।
0 Comments
Thank You!!!