কলকাতা সহর থেকে বেশ খানিক টা দুরেই, এক অনবদ্য ইতিহাসের সন্ধান পেতে পারেন অম্বিকা কালনা য়.
রেল ও সড়কপথে কালনায় যাবার সুব্যবস্থা আছে। রেলপথে হাওড়া থেকে কাটোয়া পর্যন্ত প্রসারিত একটি লুপ লাইনের দ্বারা কালনা সংযুক্ত। হাওড়া থেকে ৮১ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত অম্বিকা কালনা স্টেশনটি এই শহরের প্রধান রেলওয়ে স্টেশন। বেশ কয়েকটি লোকাল ও এক্সপ্রেস ট্রেন অম্বিকা কালনার উপর দিয়ে যায় এবং সেগুলির প্রায় প্রতিটিই এই স্টেশনে থামে। সড়ক পথে ব্যান্ডেল, পাণ্ডুয়া, বৈঁচি, মেমারি ও বর্ধমান থেকে এই শহরে যাওয়া যায়।
বর্ধমান জেলার অংশ কালনা শহরটি নদিয়া ও হুগলি জেলার সীমানার খুব কাছাকাছি অবস্থান করছে। বিখ্যাত তীর্থস্থান নবদ্বীপ ও মায়াপুর কালনার খুব কাছেই অবস্থিত।
প্রতি বছর বৈশাখ মাসের শেষ শনিবারে দেবী ভবানীর মন্দিরে বিশেষ পূজা আয়োজিত হয়। এই প্রথাটিকে জনপ্রিয়তা দিয়েছিলেন ভবা পাগলা নামক জনৈক সাধু। দেবী ভবানী মন্দিরের কাছেই শ্রীগৌরাঙ্গ মন্দির। এখানে রক্ষিত আছে চৈতন্যদেবের পাণ্ডুলিপি ও ব্যবহৃত সামগ্রী। আর একটি দ্রষ্টব্য স্থান হল সিদ্ধেশ্বরী মন্দির। এটিই দেবী অম্বিকার মন্দির, যাঁর নামে কালনা শহর অম্বিকা কালনা নামে পরিচিত।
কালনা শহরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পর্যটন আকর্ষণ হল নবকৈলাশ বা ১০৮ শিবমন্দির। ১৮০৯ সালে মহারাজ তেজচন্দ্র বাহাদুর এই ইঁটের তৈরি আটচালা মন্দিরগুলি নির্মাণ করেন। মন্দিরগুলি দুটি বৃত্তের আকারে বিন্যস্ত। একটি বৃত্তে ৭৪টি ও অপর বৃত্তে ৩৪টি মন্দির অবস্থান করছে। প্রথমোক্ত বৃত্তের মন্দিরগুলিতে প্রতিষ্ঠিত শিবলিঙ্গগুলি শ্বেত অথবা কষ্টিপাথরে ; কিন্তু শেষোক্ত বৃত্তের মন্দিরগুলিতে প্রতিষ্ঠিত শিবলিঙ্গগুলি কেবলমাত্র শ্বেত পাথরেই নির্মিত। মন্দিরের সুপরিকল্পিত নকশার কারণে সবকটি শিবলিঙ্গই মন্দির-চত্বরের কেন্দ্র থেকে দেখা যায়। সম্ভবত জপমালার প্রতীক হিসেবে মন্দিরগুলি উপস্থাপিত হয়েছে ।
১৭৫১-৫২ সালে প্রতিষ্ঠিত ২৫টি চূড়বিশিষ্ট কৃষ্ণচন্দ্র মন্দির কালনার অপর জনপ্রিয় দ্রষ্টব্য। এই জমকালো ইঁটের তৈরি পঞ্চ-বিংশতি রত্ন মন্দিরটির সামনে সংলগ্ন রয়েছে অপূর্ব অলঙ্করণে সমৃদ্ধ ত্রিখিলান প্রবেশ পথ বিশিষ্ট ঢালা ছাদের প্রলম্বিত বারান্দা । মন্দিরের গা অলঙ্কৃত মহাকাব্য ও পুরাণের বিভিন্ন দৃশ্যসম্বলিত পোড়ামাটির ফলকে সমৃদ্ধ। এছাড়াও ১৭৩৯ সালে প্রতিষ্ঠিত ২৫টি চূড়াবিশিষ্ট অপর মন্দির লালজি মন্দির এবং ১৮৪৯ সালে প্রতিষ্ঠিত রেখ দেউলের নিদর্শন প্রতাপেশ্বর মন্দিরও উল্লেখযোগ্য। প্রাকার বেষ্টিত প্রাঙ্গনে ১৭৩৯ খ্রিস্টাব্দে নির্মিত এই পঞ্চবিংশতি-রত্ন লালজি মন্দির সম শ্রেণীভুক্ত মন্দিরগুলির মধ্যে প্রাচীনতম । মন্দিরের সামনে রয়েছে একটি নাটমণ্ডপ এবং আর একটি পর্বতাকৃতি মন্দির যা গিরিগোবর্ধন নামে পরিচিত । মূল মন্দিরটি পোড়ামাটির অলঙ্করণে মণ্ডিত । এই ছবিতে কিছু পোড়ামাটির কাজের নমুনা দেখা যাচ্ছে। অন্যদিকে উঁচু ভিত্তির উপর উত্থিত এক খিলান প্রবেশ পথ ও ঈষৎ বক্র শিখর সমন্বিত প্রতাপেশ্বর মন্দিরটি ঊনবিংশ শতকের রেখ দেউলের একটি উৎকৃষ্ট উদাহরণ । মন্দিরের গায়ে রয়েছে পোড়ামাটির জমকালো অলঙ্করণ । মন্দিরের কাছেই রয়েছে একটি ছাদবিহীন রাসমঞ্চ।
মাইজির বাড়ি প্রতিষ্ঠিত হয় ১৭৫২ সালে। এই বাড়িতেই প্রতিষ্ঠিত শ্যামচাঁদ রাধারানি মন্দির। এ বাড়ির ঐতিহ্য তিনশো বছরেরও বেশি পুরনো। আজও দোল পূর্ণিমা, রথযাত্রা, ঝুলন পূর্ণিমা, অন্নকূট ও রাস বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনায় পালিত হয় এখানে। এই উপলক্ষে এখানে উপস্থিতও হন বর্ণ, ধর্ম, জাতি নির্বিশেষে সমাজের সকল স্তরের মানুষ।
প্রজাপতি বাড়িও বিশেষ পরিচিত। এই দর্শনীয় বিরাট বাড়িটির বৈশিষ্ট্য একটি বিরাটাকার প্রজাপতি প্রতীক। এই বাড়ির মালিক হেমন্ত বন্দ্যোপাধ্যায় সুর ও সাথি সংগঠনেরও মালিক। তাঁর ভাই অপূর্ব বন্দ্যোপাধ্যায় ১৯৪৭ সালে এই বাড়িতে কালীপূজার সূচনা করেন।
ছবি ও তথ্য - উইকিপিডিয়া
0 Comments
Thank You!!!