Sundarban

Image crossindia.in
সুন্দরবন জাতীয় উদ্যান ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলার একটি জাতীয় উদ্যানব্যাঘ্র প্রকল্প ও বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভ। বৃহত্তর সুন্দরবন সমুদ্র উপকূলবর্তী নোনা পরিবেশের সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বনভূমি হিসেবে অখন্ড বন যা বিশ্বে সর্ববৃহৎ[১]। অববাহিকার সমুদ্রমুখী সীমানা এই বনভূমি গঙ্গা ও ব্রহ্মপুত্রের মোহনায় অবস্থিত এবং বাংলাদেশ ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গ জুড়ে বিস্তৃত । ১০,০০০ বর্গ কিলোমিটার জুড়ে গড়ে ওঠা সুন্দরবনের প্রায় ৬,০১৭ বর্গ কিলোমিটার রয়েছে বাংলাদেশে[২]। বঙ্গোপসাগরের ৭৫ মিটার উচ্চতা পর্যন্ত জোয়ার এখানে সবসময়ই দেখতে পাওয়া যায়। ১৮৭৮ সালে সুন্দরবনের বর্তমান ভারতীয় অংশটির সংরক্ষণের কাজ আরম্ভ হয়। ১৯৭৩ সালে মূল এলাকাটি সুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্প হিসাবে ঘোষিত হয়। ১৯৭৭ সালে ২,৫৮,৫০০ হেক্টর আয়তন বিশিষ্ট সুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্পের ১৩৩,০০০ হেক্টর মূল এলাকা বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যের মর্যাদা পায়। ১৯৮৪ সালের ৪ মে’তে এটি জাতীয় উদ্যান হিসাবে ঘোষিত হয়। ১৯৮৭ সালে (ix) এবং (x) শ্রেণীতে প্রাকৃতিক সম্পত্তি হিসাবে এটি ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসাবে ঘোষিত হয়। [৩]এখানকার সজনেখালিতেলুথিয়ান দ্বীপে ও হ্যালিডে দ্বীপে বর্তমানে আরও তিনটি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য গড়ে উঠেছে। এছাড়া, পাথরপ্রতিমার কাছে ভরতপুর কুমির প্রকল্প এবং সজনেখালিতে পাখিরালয় রয়েছে। ১৯৮৯ সালে সুন্দরবনের এই ভারতীয় অংশকে বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভ ঘোষণা করা হয়।

বাংলায় সুন্দরবন - এর আক্ষরিক অর্থ সুন্দর জঙ্গল বা সুন্দর বনভূমি। সুন্দরী গাছ থেকে সুন্দরবনের নামকরণ হয়ে থাকতে পারে, যা সেখানে প্রচুর জন্মায়।

উদ্ভিদ
গরাণ, গেঁওয়া সুঁদরি, গর্জন, হেতাঁল, গোলপাতা, কেওড়া, ধোন্দল, পশুর, বাইন, কাদড়া, ওড়া, আমুড়, হদো, বেলাসুন্দরী, গিলে, বাকঝাকা ইত্যাদি সুন্দরবনের গাছপালা। এছাড়া, শিঙ্গড়া, ভাদাল, গড়ে, খলসী, হিঙ্গে, গোলদাদ, হোগলা ইত্যাদি আগাছা এবং নানাবিধ বনৌষধি পাওয়া যায়। এরাই একত্রে ম্যানগ্রোভ বনভূমি গঠন করেছে। লবণাক্ত মাটিতে শ্বাসগ্রহণের অসুবিধার কারণে এদের শ্বাসমূল তৈরি হয়েছে।[৯]



জীবজন্তু
                  রয়েল বেঙ্গল টাইগার (স্থানীয়ভাবে লোকমুখে 'বড়ো শেয়াল' বা 'বড়ো মিঞা' নামেও পরিচিত) ছাড়াও রাজহাঁসের মতো বড়-বড় গাড়াপোলা, মদনটাক, বাঁশকুয়াল, চিল, কুল্যা, ঝাঁকড়, শামখোল, মাণিক, গয়াল, করমকুলি, বনহাঁস, বালিহাঁস, পানকৌড়ি, টিয়া, হড়েল, শ্বেতকাক, দোয়েল, কাস্তেচোরা, ফিঙে, দুধরাজ, রক্তরাজ,ভীমরাজ, বিলবাচ্চু, রামশালিক, হাট্টিমাটিম ইত্যাদি নানান ধরণের পাখি; চিত্রা হরিণ, সজারু, বনবিড়াল, মেছো বিড়াল, লাল বান্দর, দেশি বন শুকর, ভোঁদড়, গুইসাপ, লোনা জলের কুমির, জলপাইরঙা সাগর কাছিম, কেটো কচ্ছপ, হাঙর, চিংড়ি, মাছ ও সাপ সহ অসংখ্য প্রজাতির প্রাণীর আবাসস্থল হিসেবে পরিচিত।

এছাড়া রয়েছে মৌমাছি ও জঙ্গলে গাছে গাছে তাঁদের বানানো মৌচাক। চৈত্র-বৈশাখ মাসে সুন্দরবনের বাসিন্দা মধু-সংগ্রাহকরা ('মৌয়াল') জীবিকার তাগিদে গভীর জঙ্গলে ঢুকে মধু আহরণ করে।[৯]

সরীসৃপ

অতিকায় বোড়া সাপ, হরিণবোড়া, কালনাগিনী, রুদ্রকাল মহাকাল, শঙ্খরাজ, বাকাল ইত্যাদি বিষধর সাপ এখানকার জঙ্গলে থাকে।[৯] এছাড়া, গুইসাপ, লোনা জলের কুমির, জলপাইরঙা সাগর কাছিম, কেটো কচ্ছপ, স্বাদু জলের কুমির এখানকার প্রধান সরীসৃপ।

ছবি - উইকিপিডিয়া 

0 Comments