ছবি ও লেখা : Saikat Khanra |
Saikat Khanra -র ডায়রী থেকে
যদিও এটা সপ্তাহান্তের ট্যুর নয় বরং সপ্তাহব্যাপী ট্যুর তবুও চাইলে কেউ একটু কাটছাঁট করে ৩/৪দিনের করে নিতেই পারেন। ডূয়ার্সের প্ল্যান টা হয়েছিল প্রায় ৭ মাস আগে। প্রাথমিক ভাবে ঠিক হয় জয়ন্তী তে ২দিন, জলদাপাড়া য় ২দিন ও মূর্তিতে ২দিন থাকা হবে, কিন্তু হলং টুরিস্ট লজে নির্দিষ্ট দিনে বুকিং না পাওয়ায় জয়ন্তী তে ১দিন কাটিয়ে আমরা পরের দিন জলদাপাড়ায় চলে যাই। যাই হোক সত্যি ওখানকার প্রত্যেকটি জায়গাই আলাদা বৈশিষ্ট্য নিয়ে নিজের মতোন করে সুন্দর। আমরা শুরু করেছিলাম জয়ন্তী থেকে। জয়ন্তী কে কেন Queen of Dooars বলে জানার জন্যে আপনাকে তো একবার ওখানে যেতেই হবে। সাদা নুড়ি বেছানো প্রশস্ত নদীর ধারে বেশ কিছু থাকার জায়গা রয়েছে যেখান থেকে নদীর খুব সুন্দর ভিউ পাওয়া যায়। খুব ভালো হয় যদি কোনো পূর্ণিমা রাত্রি টা ওখানে কাটান।
সাদা জোৎস্নায় সাদা নুড়িপাথরের চওড়া কিন্তু ক্ষীনস্রোতা নদী আপনাকে অন্য জগতে নিয়ে যাবে। ওখান থেকে সকাল সকাল চুনিয়াবস্তী সাফারি টা করে নিতে পারেন। এছাড়াও দুএকটি দেখার জায়গা আছে ইচ্ছে ও সময় থাকলে করতে পারেন। যার মধ্যে বক্সা ফোর্ট অন্যতম। পরের দুদিন আমাদের কেটেছে হলং বাংলোয়। অন্য কোনও সাফারি তে আপনি বন্য জন্তু দেখতে না পেলেও এই বাংলো থেকে আপনার সঙ্গে ওনাদের দর্শন একদম নিশ্চিত। সামনেই salt pit এ হাতি, গন্ডার, বাইসন, বিভিন্ন ধরনের হরিন, ময়ূর, বুনো শুয়োরের দল প্রায় দেখা যায়। রাতেই ওদের আনাগোনা বেশি।
হলং থেকে হাতির পিঠে সাফারি কিন্তু মিস করবেন না। জলদাপাড়া থেকেই আমরা চিলাপাতা ফরেস্ট সাফারি করেছিলাম। চিলাপাতা, ডুয়ার্স এর অন্যান্য জঙ্গল গুলোর মধ্যে বোধহয় সবচাইতে ঘন, এখানে পর্যটক দের আনাগোনা অপেক্ষাকৃত কম বলে বোধহয় একটু বেশী নির্জন। জঙ্গলের ভেতর রোদ ও ছায়ায় খেলা আপনার ভালো লাগবেই। ভেতরে রয়েছে নল রাজাদের দুর্গের অবশেষ। মূলত নল রাজার সেনাপতি চিল্লারাজ সৈন্যসামন্ত নিয়ে এই গহন অরন্যে ভুটান রাজার সঙ্গে যুদ্ধকালীন সময়ে কৌশলগত কারনে আত্মগোপন করত।
রামগুয়া বলে একধরনের গাছ আছে যার শরীরের থেকে লাল রক্তের মতোন এক ধরনের রস বেরোয়। চাইলে কেউ একদিন চিলাপাতায় বা মেন্দাবাড়ি থেকে পরের দিন জলদাপাড়ায় থাকতে পারেন। আমাদের পরের এবং শেষ গন্তব্য ছিলো মূর্তি। মূর্তি বা লাটাগুড়ি কে কেন্দ্র করে ঘুরে আসতে পারেন সানতেলখোলা, সামসিং, বিন্দু, ঝালং ও অন্যান্য জায়গাগুলি। মূর্তিতে থাকলে চাপড়ামারি জঙ্গল সাফারি টা করে নিতে পারেন। তবে গরুমারা জঙ্গল সাফারি করতে হলে লাটাগুড়ি তে থাকাই ভালো।
।।কিছু তথ্য।।
আমরা গিয়েছিলাম কাঞ্চনকন্যা এক্সপ্রেসে, উত্তরবঙ্গ যাওয়ার ও ফিরে আসার এটাই সবচেয়ে ভালো ট্রেন। জয়ন্তী যেতে চাইলে নামতে হবে আলিপুরদুয়ারে। যদি লাটাগুড়ি বা মূর্তি যেতে চান তাহলে নামুন নিউ মাল জাংশানে।
বক্সা টাইগার রিজার্ভ ফরেষ্টে সাফারির টিকিট ৩/৪ মাস আগে থেকে কাটতে হয়, যদিও অন্যান্য জঙ্গল সাফারির টিকিট দিনের দিন ই দেওয়া হয়। হলং টুরিষ্ট বাংলোতে থাকতে হলে ৬ মাস আগে যেদিন বুকিং ওপেন হয় সেই দিনেই করতে হবে, অন্যথায় বুকিং পাবেন না। হলং এ বুকিং না হলে জলদাপাড়া টুরিস্ট লজে থাকাই ভালো। অনলাইনে সমস্ত বুকিং করা যায়। মুর্তি তে সরকারি ও বেসরকারি অনেক রিসর্ট আছে। নদীর ধারে ও আশপাশের যে কোনো একটি তে আপনি থাকতে পারেন।
ছবি ও লেখা : Saikat Khanra
কপিরাইটেড কনটেন্ট
0 Comments
Thank You!!!